অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই পিএসজি ছেড়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে যোগ দিয়েছেন নেইমার জুনিয়র। নেইমারের এই সিদ্ধান্তে যেমন হতবাক হয়েছিলো তার ভক্তরা তেমনি তাদের কপালে দেখা গিয়েছিলো চিন্তার ভাঁজ কেননা সৌদি আরবে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলে নেইমারের ক্যারিয়ারের ইতি টানা হয়ে যেতে পারে খুব দ্রুতই। সেই শংকার মেঘ আরো বেশি কালো হতে থাকে আল হিলালের জার্সিতে নেইমারের শুরুটা দেখে। অভিষেক ম্যাচটা দারুণ হলেও এরপর থেকেই নেইমারকে যেনো নেইমারের মতো করে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না, গোল করাতে সতীর্থদের সাহায্য করলেও গোলের খেলা ফুটবলে সেই গোলের দেখাটা কিছুতেই পাচ্ছিলেন না এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। যে পেনাল্টি নেয়ার জন্য নেইমারের আছে দারুণ খ্যাতি সেই পেনাল্টিও করেছেন মিস!
তবে এই শংকার মেঘ অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও কেঁটে গেছে নেইমার ভক্তদের মন থেকে কেননা নেইমার যে গতকাল পেয়েছেন আল হিলালের জার্সিতে গোলের দেখা, দলকে এনে দিয়েছেন দারুণ জয় এবং নেইমারের উপস্থিতি তার দলকে কতোটা উজ্জীবিত করতে পারে তার যথাযথ প্রমাণ মিলেছে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের গতকালের ম্যাচে।
সৌদি প্রো লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা আল হিলালের এবারের এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের যাত্রাটা খুব একটা সুখকর হয়নি, প্রথম ম্যাচে হারতে হারতে শেষ মুহূর্তের গোলে ঘরের মাঠে ১-১ গোলের ড্র করেছিলো আল হিলাল। সেই ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে থাকা নেইমারকে নিয়েও হয়েছিলো সমালোচনা, তবে সেই সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছে নেইমার নিজেই। ইরানের ক্লাব নাসাজির মাঠে শুরু থেকেই গোছানো ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে আল হিলাল, ম্যাচের শুরুতেই তাদের একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হলেও ১৮ মিনিটে মিত্রভিচের গোলে লিড নেয় আল হিলাল। সৌদির দলটি এগিয়ে যাওয়ার পর দুই দলই অনেকটা শারীরিক ফুটবল খেলার চেষ্টা করে এবং তারই প্রেক্ষিতে ম্যাচের ৩৮ মিনিটে দুই দলের দুইজন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ১০ জনের দলে পরিণত হয় দুই দল। প্রথমার্ধে উল্লেখ করার মতো আর কোনো ঘটনা না ঘটলেও নেইমার ছিলেন নিস্প্রভ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সেই নেইমার ফিরে আসেন স্বরূপে, ম্যাচের ৫৮ মিনিটে বা পায়ের শটে নেইমার যে গোলটি করলেন তা তার ভক্তদের মাঝে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সেই উৎসবের আমেজ বহুগুণ বেড়ে যায় বেশ কিছু কারণে কেননা এটিই আল হিলালের জার্সিতে নেইমারের প্রথম গোল এবং এই গোলের মধ্য দিয়ে ফুটবল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসাব তিনটি ভিন্ন মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর কোপা লিবার্তোদোরেস, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, এএফসি চ্যাম্পিয়নস লীগে গোল করার নজির গড়েন নেইমার জুনিয়র। গোলের পর নেইমারের উদযাপনই বলে দিয়েছে এই গোলের জন্য তার ভক্তদের মতো নিজেও বেশখানিকটা অপেক্ষায় ছিলেন। গোল পাওয়ার পর নেইমার হয়ে ওঠেন আরো উজ্জীবিত এবং ভাগ্য সহায় হলে নিজের দ্বিতীয় গোলটিও পেয়ে যেতেন এই ব্রাজিলিয়ান যদি না পোস্টে লেগে বল ফিরে আসতো।
ম্যাচের শেষ দিকে স্বাগতিকরা আল হিলালকে চেপে ধরার চেষ্টা করলেও গোলমুখ খুলতে পারেনি, যদিও আল হিলালের গোলপোস্ট কাঁপানোর পাশাপাশি গোলকিপারের বেশ কয়েকবার পরিক্ষা তারা নিয়েছে। তবে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে আল হিলালের হয়ে গোল করে দলের ৩-০ গোলের জয় নিশ্চিত করেন আল সেহরি। এই জয়ের ফলে গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে নেইমারের দল।