ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ আসর চ্যাম্পিয়নস লিগ মানেই তারায় তারায় টক্কর, সেই তারার লড়াই যদি হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি আর সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে তাহলে সেই মহারণের উত্তেজনা যে সব ছাপিয়ে পৌঁছে যায় মহাশূন্যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই উত্তাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালের ১ম লেগে রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৩-৩ গোলের ড্র হওয়ার ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হচ্ছিলো ইতিহাদে দ্বিতীয় লেগে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।
কোয়ার্টার ফাইনাল বাধা টপকে সেমিফাইনালের টিকিট কাটার জন্য দুই দলকেই মেলাতে হতো বেশকিছু জটিল সমীকরণ। সেই সমীকরণ মেলানোর কাজটা ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ছিলো বেশি চ্যালেঞ্জিং কেননা এই মৌসুমে সিটিজেনরা যেমন নিজেদের মাঠে হারেনি তেমনি রিয়াল মাদ্রিদও কখনো পারেনি ইতিহাদ থেকে জয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে। শুধু কি তাই? চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট স্টেজের ১ম লেগে ড্র করে কখনোই ২য় লেগে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেয়নি সিটিজেনরা, সাথে গত মৌসুমেই এই মাঠে রিয়াল মাদ্রিদকে বিধ্বস্ত করার সুখস্মৃতিও ম্যানসিটিকে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে রেখছিলো এগিয়ে।
বেশিরভাগ সমীকরণ নিজেদের পক্ষে থাকায় ম্যানসিটির শুরুটাও ছিলো দারুণ তবে ম্যাচের ১২ মিনিটে আচমকা এক আক্রমণে বেলিংহ্যাম-ভিনিদের দক্ষতায় সিটিজেনদের ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ম্যানসিটিকে সামনে পেলেই জ্বলে ওঠা ব্রাজিলিয়ান তারকা রদ্রিগো। গোল হজম করে রিয়াল মাদ্রিদকে চেপে ধরে পেপ গার্দিওলার দল, একের পর এক আক্রমণে রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্স লাইনকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে ফোডেন-সিলভারা। তবে তাদের প্রতিটি আক্রান্ত দারুণ দক্ষতায় রুখে দিয়েছেন মাদ্রিদ গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন। এছাড়া সিলভা-হাল্যান্ডদের প্রচেষ্টা কয়েকবার গোলপোস্টে লেগে ফিরে এলে প্রথমার্ধে গোলের মুখ না দেখেই বিরতিতে যায় ম্যানসিটি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে আরো চেপে ধরার চেষ্টা করে সিটিজেনরা যার ফল পায় ম্যাচের ৭৬ মিনিটে, ডোকু নৈপুণ্যে ম্যানসিটিকে সমতায় ফেরান দলের সবচেয়ে বড় ভরসা কেভিন ডি ব্রুইনা। ম্যাচের সমতায় ফিরে আরো বেশি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ম্যানসিটি তবে বেলিংহ্যামদের ফাঁকি দিয়ে গোল করা হয়ে ওঠেনি হাল্যান্ডদের, উল্টো ম্যাচের শেষ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদের রুডিগার একটি সহজ সুযোগের পাশাপাশি জয়ের সুযোগও করেন হাতছাড়া। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলায়ও আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে ম্যানসিটি, ঝটিকা আক্রমণ ছাড়া বলার মতো তেমন আক্রমণ শানাতে পারেনি মাদ্রিদ।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে এবং প্রথম শট থেকেই সিটিকে ১-০তে এগিয়ে নেন আলভারেজ কিন্তু লুকা মড্রিচ ব্যর্থ হলে স্বস্তি ফেরে সিটিজেনদের শিবিরে। সেই স্বস্তি অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি কেননা সিলভার শট অনায়াসেই রুখে দেন লুনিন। সমতায় ফেরার সুযোগ বেলিংহাম মিস না করলেও নিজের সাবেক দলের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেন সিটির কোভাচিচ। এরপর একে একে রিয়াল মাদ্রিদের ভাস্কেজ, নাচো এবং ম্যানসিটির ফোডেন ও এডারসন গোল করলে সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ শটে রুডিগার গোল করলেই সেমিফাইনালের টিকিট পাবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং সেই কাজটা সম্পন্ন করতে ভুল করেননি এই জার্মান তারকা, ফলে ইতিহাদের সব প্রতিরোধ এক নিমিষেই ভেঙে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হতাশায় নিমজ্জিত করে উল্লাসে ফেঁটে পরে মাদ্রিদিস্তারা। হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে জয় পরাজয় ছাপিয়ে ফুটবল ভক্তরা উপভোগ করেছে ফুটবলের সৌন্দর্য এবং ম্যাচের আগে কার্লো আনচেলত্তির বলা, “রেকর্ড গড়া হয় ভাঙ্গার জন্য” কথাটাই আরেকবার হলো প্রমাণিত!