কার্লো আনচেলত্তির কোচিং ক্যারিয়ারটা এতো বেশি সমৃদ্ধ যে চাইলেই তাকে এই সময়ের সেরা কোচ বলে আখ্যায়িত করা যায়। কি নেই তার ঝুড়িতে? সর্বোচ্চ সংখ্যক চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়ের রেকর্ড, ইউরোপের টপ ৫ লিগেই লিগ শিরোপা জয়ের রেকর্ড, সবই তাকে সেরা বলে প্রমাণ করতে প্রস্তুত! কিন্তু তাকে নিয়ে যথাযথ চর্চা হয়? পেপ গার্দিওলা, জার্গেন ক্লপ, জোসে মৌরিনহোরা সচারাচর আলোচনায় এলেও কার্লোকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না ফুটবল পাড়ায়।
কার্লোকে নিয়ে আলোচনা কম হওয়ার পেছনে বড় একটা কারণ হতে পারে ডাগআউটে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা, অদ্ভুত কোনো কিছু প্রকাশ্যে চেষ্টা না করে নিরবে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, মিডিয়ার সামনে এসে ফাঁকা গুলি না মারা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে বারবার শিরোনামের কারণ না হলেও তিনি মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে যে বেশ পটু তার প্রমাণ হতে পারে গতকাল লিভারপুলের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচটি!
প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে যখন একটি দল ৩ গোলের লিড নিয়ে বাড়ি ফেরে তখন ২য় লেগে স্বাভাবিকভাবেই একটু ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে থাকে, সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রজন্মের কোচদের দেখা যায় একজন বেশি সেন্টার ডিফেন্ডার অথবা একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলান। ক্যাসেমিরো চলে যাওয়ায় রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে বড় একটা ফাঁকা সৃষ্টি হলেও চুয়োমিনির দারুণ ফর্ম ক্যাসেমিরোর অভাব অনেকটাই ঢেকে দিয়েছে। তবে কার্লো গতকাল চুয়োমিনিকে শুরুর একাদশে না খেলিয়ে কামাভিঙ্গাকে দিয়ে শুরু করলেন, যার অর্থ মদ্রিচ-ক্রুসের সাথে আরেকজন মিডফিল্ডার যিনি তাদের মতোই অনেকটা এগ্রেসিভ ফুটবল খেলে থাকেন। ৩ গোলের লিডের পর এমন সিদ্ধান্ত কিছুটা অবাক করার মতো হলেও কার্লো স্পষ্ট ধারণা রেখেই ট্যাক্টিসটা ব্যবহার করেছেন যার ফল মিলেছে মাঠে।
কার্লো খুব ভালো করেই জানতেন লিভারপুল অল আউট ফুটবল খেলবে যার অর্থ আক্রমণে ওঠার পর তাদের ডিফেন্স অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে যাবে এবং সেখান থেকে কুইক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল বেড় করা সম্ভব, ঠিক এই কারণেই তুলনামূলক দ্রুতগামী ফুটবলার কামাভিঙ্গাকে কার্লো শুরু থেকে খেলিয়েছেন, ফলস্বরূপ সেই কামাভিঙ্গার পাস থেকেই রিয়াল মাদ্রিদের করা একমাত্র গোলের সূচনা হয়েছে।
আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলতে গিয়ে কার্লো যে ডিফেন্স বা মিডের কথা ভুলে গেছেন তা কিন্তু না, যেহেতু কামাভিঙ্গাকে দিয়ে ঘোড়ার চাল চেলেছেন তাই আক্রমণভাগে ভিনি-বেনজেমার সাথে রদ্রিগো বা এসেন্সিওকে তিনি খেলাননি, খেলিয়েছেন ভালভার্দেকে যে এই মৌসুমে কিছু গোল পেলেও প্রোপার উংগার না। যার অর্থ কামাভিঙ্গার কারণে মিডফিল্ডে যদি অসাম্যতা দেখা দেয় তাহলে ভালভার্দের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান বা ব্যালেন্স করা হবে। আবার করিম বেনজেমাও গতকাল তুলনামূলক নিচে খেলে কাউন্টার অ্যাটাক সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, এগুলো কি হয়েছে খেলোয়াড়দের ইচ্ছায়? খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টা অবশ্যই তবে পরিকল্পনাটা খোদ কার্লো আনচেলত্তির!
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লীগ ট্রফিটা অবিশ্বাস্যভাবে রিয়াল মাদ্রিদ জেতায় অনেকেই মনে করছিলেন কার্লোর ভাগ্য ভালো যে তার খেলোয়াড়রা দুর্দান্ত কিছু করে দেখিয়েছে, তবে কার্লোর এমন ছোটখাটো পরিকল্পনাগুলো যে কতো বড় টনিক হিসেবে কাজ করেছে সেটা নিয়ে চর্চা খুব বেশি হয়নি। নয়তো অন্য ক্লাবগুলোর হয়েও কিভাবে এতো সাফল্য পেয়েছেন এই ইতালিয়ান? জাদুর কাঠি তো তার হাতে একটা অবশ্যই আছে।