Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp

সাম্বা নৃত্য বা জাগো বোনিতোর ছন্দ নিয়ে ব্রাজিল ভক্তদের গর্বের সীমা কখনোই ছিলো না কিন্তু সেই ছন্দটা কি সাম্প্রতিককালে দেখাতে পেরেছিল ব্রাজিল? জয়ের ধারায় ছিলো ঠিকই, কিন্তু সেই ছন্দটা কেটে যাচ্ছিলো বারবার। অবশেষে সেই ছন্দের খোঁজে থাকা ব্রাজিল ভক্তরা উপভোগ করলো জাগো বোনিতোর সেই ছন্দ, দেখলো সাম্বা নৃত্য এবং রোমাঞ্চিত হলো ৯০ মিনিটের প্রতিটি সেকেন্ডে!

বিশ্বকাপ এলেই ব্রাজিলের গায়ে লেগে যায় হট ফেভারিটের তকমা এবং এটাই খুব সম্ভবত ফুটবলের ধ্রুব সত্যি। কেন তারা ফেভারিট, কেন তারা স্বপ্ন দেখে বিশ্বজয়ের তার ব্যাখ্যা নতুন করে হয়তো দেয়ার প্রয়োজন নেই কিন্তু সেই ফেভারিটের মান কি রাখতে পারছিলো সেলেসাওরা? জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও দিনে দিনে পারফরম্যান্সের হচ্ছিলো অবনতি, এমনকি গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো ব্রাজিলের। অজুহাত হিসেবে ইনজুরি এবং ক্লান্তির কথা তিতে বলতেই পারতেন কিন্তু ব্রাজিলের ক্ষেত্রে কি খাটে কোনো অজুহাত?

সব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে গতকাল। ইনজুরিতে জর্জরিত ব্রাজিল গতকাল শুধু নিজেদের সেরা খেলাটাই দেয়নি, ভক্তদের মনে সাহস সঞ্চয় করার জন্য যা যা করা দরকার সবই করেছে। ইনজুরি থেকে ফেরা নেইমার শংকা নিয়ে মাঠে নামলেও নিজের জাত চেনাতে ভুল করেননি, ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন হলুদ জার্সির নেইমারের সেরা পারফরম্যান্স করতে পুরোপুরি ফিট থাকার প্রয়োজন নেই, মাঠে নামার মতো অবস্থায় এলেই তিনি দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন সামনে থেকে।

ব্রাজিল যেখানে তাদের শেষ ম্যাচ হেরেছিল সেখানে পর্তুগালকে শেষ মূহুর্তের গোলে হারিয়ে দিয়ে বড় ধরনের একটা চমক দেখিয়েই শেষ ষোলোর টিকিট কেটেছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। যদিও এই দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে পরিস্কার ফেভারিট নেইমাররাই ছিলো তবুও এবারের বিশ্বকাপ মঞ্চে যে পরিমাণ অঘটন ঘটছে তাতে বুকে হাত দিয়ে ব্রাজিলের পক্ষে নিশ্চিতভাবে বাজি ধরার লোক খুব বেশি পাওয়া যাবে না মেনে নেয়াটাই ছিলো স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু ম্যাচ শুরুর পরই কেটে যাওয়া সকল শংকা, প্রথম মিনিট থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিলো সিলভাদের হাতে।

যে ভিনিসিয়াসকে নিয়ে ব্রাজিলের জার্সিতে ঠিকঠাকভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ উঠছিল তা থামিয়ে দিতে এই ম্যাচকেই হয়তো বেছে নিয়েছিলেন এই তরুণ তুর্কী এবং নিজের জাত চেনাতে মাত্র ৮ মিনিট নিলেন ভিনি। দলীয় এক আক্রমণ থেকে পাকুয়েতার বল পাস নেইমারের পা হয়ে ভিনির কাছে গেলে ঠান্ডা মাথায় গোলকিপার ও চার ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। এগিয়ে গিয়ে ম্যাচের লাগামটা সম্পূর্ণ নিজেদের হাতে নেয়ার পর লিড ২-০ করতেও খুব একটা দেরি করেনি সেলেসাওরা। রিচার্লিসনের আদায় করা পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি ইনজুরি থেকে ফেরা নেইমার জুনিয়র। এই গোলটি ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারের ৭৬তম গোল যার অর্থ ব্রাজিলের জার্সিতে পেলের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে ভাগ বসাতে নেইমারের প্রয়োজন আর মাত্র ১ গোল। এই গোলের আরেকটা মহত্ত্ব আছে, মাত্র ৩য় ব্রাজিলিয়ান হিসেবে ভিন্ন তিন বিশ্বকাপে গোল করার মাইলফলক স্পর্শ করলেন নেইমার এবং তার আগে এই কাজটা করতে পেরেছেন পেলে ও রোনালদো নাজারিও।

ভিনি-নেইমারের পর জাদু দেখান রিচার্লিসন। সার্বিয়ার বিপক্ষে দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো একটা গোল করা রিচার্লিসন ব্রাজিলকে এই ম্যাচে যে গোলটি উপহার দিয়েছেন সেটা খুব সম্ভবত ব্রাজিলের জাগো বোনিতোর সেরা উদাহরণ। ডি বক্সের বাইরে থেকে বল দখলের লড়াইয়ে জিতে বলটা মাথায় রেখেই জাগলিং করলেন তিনবার এবং যখন বলটা মাটিতে নেমে এলো পায়ের কারুকাজে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে পুরো বোকা বনে পাঠান রিচার্লিসন, সেখান থেকে তার পাস যায় মার্কুইনেসের কাছে সেখান থেকে সিলভার পা হয়ে বল আবার রিচার্লিসনের কাছে এবং বল জালে যেতে আর বেশি সময় লাগেনি। নাম্বার নাইন পজিশনের খেলোয়াড়ের সাথে দুই ডিফেন্ডারের রসায়ন এবং সেখান থেকে গোল। টোটাল ফুটবল বলে যে কথাটা ফুটবল ভক্তরা শুনে আসছে সেটার নিদর্শনও হতে পারে এই গোলটা। এরপর গোল আরো একটা হয়েছে যার মালিক ম্যাচজুড়ে দারুণ খেলা পাকুয়েতা। ভিনির পাস থেকে ডি বক্সের ভিতরে জটলার মধ্য থেকে পাকুয়েতা যেভাবে বলটা জালে জড়িয়েছেন তাতে তিনি সাধুবাদ পেতেই পারেন।

চার গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যাওয়ার ব্রাজিল দ্বিতীয়ার্ধে আর গোলের দেখা পায়নি, তবে গোল মিসের মিছিল না দিলে আরো গোল আসতে পারতো নিঃসন্দেহে। যদিও অর্ধে দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে এবং সুয়াং হো পাইকের দারুণ গোলে ব্যবধানটাও কামিয়েছে ঠিকই তবে এই অর্ধের সেরা খেলোয়াড় এলিশন বেকার। আগের দুই ম্যাচে গোলমুখে একটা শটও প্রতিপক্ষ নিতে না পারলেও এই ম্যাচে বেশ কয়েকবার বড় ধরনের পরিক্ষা দিতে হয়েছে এই লিভারপুল গোলকিপারকে। সেই পরিক্ষায় একবার ব্যর্থ হয়েছেন ঠিকই কিন্তু এক্ষেত্রে এলিশনের ব্যর্থতার চেয়ে পার্কের প্রশংসা করাটাই হয়তো উত্তম কাজ। এছাড়া দারুণ কিছু সেইভ করে এলিশন শুধু দলকেই সুরক্ষিত রাখেননি, বুঝিয়ে দিয়েছেন এডারসনের মতো বিশ্বমানের গোলকিপার থাকতেও তিনি কেন ব্রাজিলের অটো চয়েজ গোলকিপার, যদিও শেষ মূহুর্তে তাকে তুলে নিয়ে ওয়েভারটনকে মাঠে নামান তিতে যার ফলে ব্রাজিলের স্কোয়াডের প্রতিটি সদস্যই এবারের বিশ্বকাপে খেলার গৌরব অর্জন করেছেন।

ব্রাজিলের এই ম্যাচের পারফরম্যান্স স্কোরলাইন দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয় কেননা দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ই নিজেদের মেলে ধরেছেন দারুণভাবে। তাই তো ম্যাচ সেরা নেইমারের মতে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পুরো দলের। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, “আমরা দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছি। সবাই ভালো খেলেছে তাই এককভাবে কাউকে ম্যাচ সেরা বলা কঠিন, এই পুরস্কার পুরো দলের।”
দলের জয়ে সন্তুষ্ট হলেও আরো উন্নতির জায়গা দেখছেন নেইমার। তিনি বলেন, “অসাধারণ একটা রাত কেটেছে আমাদের। তবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই এবং অবশ্যই উন্নতির জায়গা আছে যা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।”
নিজের পারফরম্যান্স এবং ইনজুরি নিয়েও কথা বলেছেন নেইমার। জানিয়েছেন, “আমি আমার পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে আমার পায়ে ব্যথা অনুভব করিনি। আমি ম্যাচটা উপভোগ করেছি।”

এছাড়া ফুটবল রাজা পেলের অসুস্থতা নিয়েও মুখ খুলেছেন ব্রাজিলিয়ান প্রাণভোমরা। পেলের সুস্থতা কামনা করে নেইমার বলেন, “আমি ঠিক জানি না তিনি কি অবস্থায় আছেন, তবে আমরা বিশ্বাস করি তিনি আমাদের সাথেই আছেন এবং জয়টা উপভোগ করেছেন। আমরা সবাই তার সুস্থতা কামনা করছি।”

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন

ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ আসর চ্যাম্পিয়নস লিগ মানেই তারায় তারায় টক্কর, সেই তারার লড়াই যদি হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি […]

Scroll to Top